লিখেছেন বিশিষ্ট সংবাদিক অরূপ কালী

ইস ক্যামেরাটা যদি থাকত

বছর, দিন এখন আর সঠিক মনে নেই। প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা। ঘটনাস্থল ইন্দিরা ভবন।
সেই সময় আমার সাপ্তাহিক ছুটি থাকত শনিবার। প্রায় শনিবার আমি ইন্দিরা ভবনে যেতাম। ওখানেই থাকতেন জ্যোতি বসু। ওনার সঙ্গে দেখা করতে নয়, আড্ডা মারতে যেতাম জয় দার সঙ্গে। জয়কৃষ্ণ ঘোষ হিসেবে একডাকে সবাই যাকে চিনত।
আদতে আড্ডা বলছি ঠিকই। আমি যেতাম খবরের সন্ধানে। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জয়কৃষ্ণ ঘোষ বকলমে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পুলিশ অধিকারিকদের লাইন লেগে থাকত জয়দার দরজায়। প্রচুর খবর রাখতেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ক্ষমতার বৃত্ত থেকে তিনি ছিটকে গিয়েছিলেন। ঠিক অনুমান করেছেন, আমি যেতাম খবরের সন্ধানে। বয়েস কম ছিল। ছুটির দিনেও খবরের জন্য ঘুরে বেড়াতাম।

জ্যোতি বাবুর বাংলোর পাশে একটা ঘরে বসতেন জয় দা। একবার গল্প শুরু হলে খালি হাতে ফিরতাম না। কোনও একদিন জয়দার ঘর থেকে দেখি জ্যোতিবাবু বারান্দায় একজনের সঙ্গে কথা বলছেন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, ওনার ধুতি ও পাঞ্জাবি ছিল বেশ মলিন। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী খুব অন্তরঙ্গতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই রাশভারী ভাবে উধাও।

জয়দার কাছে জিজ্ঞাসা করি, ওই ভদ্রলোকটি কে? জানলাম প্রাক্তন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সরোজ মুখোপাধ্যায়ের কোনও আত্মীয়। কোনও প্রয়োজনে জ্যোতি বসুর কাছে এসেছেন।

যে জ্যোতি বসুকে লোকে চেনে জানে তিনি ছিলেন একেবারে ভিন্ন মেজাজে। মনে হচ্ছিল নিকট কারোর সঙ্গে আড্ডা মারছেন। যতদূর মনে আছে উনি লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরেছিলেন। মাঝেমধ্যে হাসছিলেন। যা সাংবাদিকদের কাছে ছিল দুর্লভ ছবি। ২৫ বছরের রাশভারী মুখ্যমন্ত্রী সেখানে উধাও।

সেইসময় মোবাইলের যুগ নয়। কোনও ঘটনা চোখের সামনে দেখলে মনের ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখতে হত। এরকম অজস্র টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা স্মৃতির প্রাচীর সরিয়ে মাঝেমধ্যে সামনে চলে আসে।

অরূপ কালী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *