রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য এক টাকা নিতেন ।
আর সেই অটোগ্রাফের টাকা তোলা নিয়ে হয়ে গেল এক ধুন্ধুমার কাণ্ড! নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ভক্তদের কাছে কবির জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল, বলার নয়।
নিজের অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত কবির অটোগ্রাফ নিতে আসতে শুরু করল।
প্রতিদিন অসংখ্য অটোগ্রাফের খাতা আসত কবির কাছে।শুধু নাম সই করলে চলবে না, সঙ্গে দু’এক লাইন কবিতাও চাই। প্রতিদিন কবিকে প্রচুর অটোগ্রাফের খাতায় সই করতে হত।এছাড়া আরো অনেক আবদার মাখানো চিঠি আসত প্রতিদিন।
যেমন, আমার ছেলে বা মেয়ের একটা নাম দিন দয়া করে। সামনে মেয়ের বিয়ে, একটু আশীর্বাণী লিখে দিন।
ছেলের অন্নপ্রাশন, দু’এক লাইন লিখে দিন আশীর্বাণী।
কার্ডে ছাপা হবে।
অদ্ভুত সব চিঠি আসত। কেউ একটা কবিতার বই ছাপিয়েছে। সেই কবি আবদার করে লিখছে, আপনি নোবেল কমিটির কাছে সুপারিশ করে একটা চিঠি লিখে দিন যাতে এ বছরের নোবেল প্রাইজটা আমি পেতে পারি। কবি এইসব পড়ে কাঁদবেন না হাসবেন, ভেবে পেতেন না।
একটা সময় ব্যাপারগুলো কবির কাছে অসহ্য হয়ে গেল। কবি ঠিক করলেন এবার থেকে আমি এক টাকা করে নেব অটোগ্রাফের জন্যে। এতে ভিড় কিছুটা কমবে। আর এই টাকা শান্তিনিকেতনের দরিদ্র ভান্ডারের জন্য জমা হবে। দরিদ্র ভান্ডারের উপকারও হবে।
রবীন্দ্রনাথ এ কাজের দায়িত্ব দিলেন আশ্রমের একজন আলু নামের কর্মীকে। ভিড় তো কমলোই না উল্টে
এই আলুর জন্যে কবিকে কত বিড়ম্বনায় যে পড়তে হল, তা বলার নয়। আলুকে অটোগ্রাফের জন্য টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আলু টাকা তুলতে লাগল।
কিন্তু মুশকিল হল আলু একটু বাড়াবাড়ি শুরু করে দিল। আলু শেষে আশ্রমের ছেলেমেয়েরা অটোগ্রাফের জন্যে এলেও, তাদের কাছ থেকেও টাকা নিত।
এমনকি কবির পরিচিত মানুষদের কাছ থেকে অটোগ্রাফের জন্য টাকা নিত।
কবি বললেন,
আরে আলু করছো কি?
ওদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছো কেন?
আলু বলে, আপনিই তো নিয়ম করেছেন, আমি কি করবো?
শেষে কবি বললেন,
থাক অনেক হয়েছে বাবা, আর তোমাকে টাকা তুলতে হবে না।
এবার থেকে অটোগ্রাফের জন্যে কাউকে টাকা দিতে হবে না।
কবি হয়’ত মনে মনে বলেছিলেন কেন যে মরতে নোবেল প্রাইজটা পেলাম!
এজন্য কবি কি মনের দুঃখে গান লিখেছিলেন?
” এ মণিহার আমায় নাহি সাজে। “
কে জানে?
তথ্য সূত্রঃ
কবির স্নেহধন্যা রাণী চন্দের বই, “গুরুদেব ” থেকে নেওয়া ।
