অরিজিৎ মৈত্র : বিদ্রোহী কবি, প্রেমিক কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পর্কে অন্নদাশংকর রায় লিখেছিলেন, ‘আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে, ভাগ হয়নি কো নজরুল। সমস্ত সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার উর্ধে ওঠা দুই বাংলার প্রাণের কবি নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চারুবাসনার উদ্যোগে গত ১১ জুন যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টসের উপেন্দ্রকিশোর সভাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল ‘হৃদয়ে নজরুল’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান। সমগ্র অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ‘ছায়ানট’ সংস্কৃতি সংস্থা। অনুষ্ঠান শুরু হয় ছায়ানটের কর্ণধার সমঋতা মল্লিকের একক সঙ্গীতের মাধ্যমে। তাঁর কণ্ঠে, ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে’ গানটি গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেন। এরপর একে একে কবির গান ও কবিতার মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছায়ানটের শিল্পীরা। দৃপ্তকণ্ঠে নজরুল ইসলামের ‘আগমনী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের মাঝে চারুবাসনার কর্ণধার এবং বিশিষ্ট চিত্রকর যোগেন চৌধুরীকে সম্মান জ্ঞাপন করে বরণ করে নেন ছায়নোট সংস্থার কর্ণধার এবং একালের নজরুল গবেষক সমঋতা মল্লিক। যোগেনবাবু উত্তর কলকাতার টালাপার্কের বাড়িতে নির্বাক কবিকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন উপস্থিত শ্রোতাদের সঙ্গে। এরপর নজরুলের ভিন্ন স্বাদের দুটি গান পরিবেশন করেন শিল্পী পিনাকী চক্রবর্তী। তাঁর পরিবেশত, ‘ জাতের নামে বজ্জাতি’ গানটি বর্তমান সময়ে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। অত্যন্ত সাবলীলভাবে গানটি গেয়ে তিনি সবার প্রশংসা অর্জন করেন। পরবর্তী শিল্পী ড. সুজাতা রায় মান্না পরিবেশন করলেন তিনটি গান। প্রথমটি নজরুল রচিত অল্পশ্রুত রাগপ্রধান, ‘গগনে সঘনে চমকিছে দামিনী, এরপর একটি শাক্তসাধক কাজী সাহেব রচিত একটি শ্যামাসঙ্গীত আর শেষ গান, “উচাটন মন ঘরে রয়না’। এই তিনটি গানই নজরুলঅনুরাগী শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে অতি দক্ষতার সঙ্গে নজরুলগীতি পরিবেশন করেন অনীশ সাহা। তাঁর প্রথম নিবেদন, ‘ঝরা গোলাপে যদি ফিরিয়া সে আসে ‘শুনতে বড় ভাল লাগল। এদিনের অনুষ্ঠানে শেষ শিল্পী ছিলেন নীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরিবেশনায় ছিল কবির ভাটিয়ালী গান এবং শ্যামাসংগীত। নীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আমার গহীন জলের নদী’ নাগরিক পরিবেশের মধ্যে যেন এক ঝলক পল্লীপ্রকৃতির ছোঁয়া এনে দিল। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চলনায় ছিলেন সমঋতা মল্লিক ।
