এক ঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্রের উপস্থিতিতে শেষ হলো বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান অনুষ্ঠান

নিজস্ব সংবাদদাতা: ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটির সহযোগিতায় কলেজ স্ট্রিট এর ঐতিহ্যবাহী প্রকাশন সংস্থা সন্ধ্যা প্রকাশন এর আয়োজনে সম্প্রতি ১৩তম “বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান ” অনুষ্ঠিত কলকাতা প্রেস ক্লাবে। এবারের সেরার সেরা বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান পেলেন রাজ্য তথা দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র পরিচালক অশোক বিশ্বনাথান। এ ছাড়াও গোটা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও ৯ জন বিশিষ্ট ও কৃতি মানুষকে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। ছোটদের বিভাগেও দুজনকে মনোনীত করা হয়। সংস্থার প্রধান তথা সন্ধ্যা প্রকাশন এর কর্ণধার বিশিষ্ট সাংবাদিক শংকর দত্ত জানান,মূলত শিক্ষা,সাহিত্য,সমাজসেবা,সৃজনশীল উদ্যোগ,গবেষণা, নৃত্য,সঙ্গীত – সহ একাধিক বিষয়ে এই সম্মান দেওয়া হয়।।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কথা- সাহিত্যিক নলিনী বেরা, প্রখ্যাত অভিনেতা ও সঞ্চালক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রবাদপ্রতিম প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ইমপ্রিসিও (অনুষ্ঠান আয়োজক) তোচন ঘোষ, বিশিষ্ট সাংবাদিক জয়ন্ত চক্রবর্তী,গোপাল ঘোষ,শ্যামলেন্দু মিত্র, তরুণ পরিচালক এবং টিভি স্টার ঋতব্রত ভট্টাচার্য সহ আরও বহু ক্ষেত্রর গুণীজনের।
এদিন অনুষ্ঠান শেষে ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটির মূখ্য পরিচালক শংকর দত্ত বলেন, বহু গুণী মানুষের উপস্থিতিতে এই সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয় আজ থেকে বার বছর আগে এই প্রেস ক্লাবেই। কোভিড পরিস্থিতির কারণে মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর আবার চালু হয়। এ বছর সেই অনুষ্ঠানকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় কলকাতা প্রেস ক্লাবেই। তাঁর কথায়, এ বছর এই সম্মান প্রাপ্তির জন্য প্রায় তিনশোরও বেশি আবেদন জমা পরে। সেখান থেকে কমিটি মাত্র এগারো জনকে মননীত করে। তাঁর কথায়,,’আমরা সারা বছর ধরেই কলকাতা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাংস্কৃতিক জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গুণী ও জ্ঞানী মানুষ আছেন, যাঁদের খোঁজ রাখার চেষ্টা করি। বহু প্রতিভা আছে, যাঁরা প্রচারের আড়ালে থেকে নীরবে কাজ করে যান। সেইসব মানুষদের অন্বেষণেই থাকে ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি। আগামী দিনে আরও বৃহৎ পরিসরে আরও মানুষকে সম্মান জানাতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’

এদিন প্রখ্যাত পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন এর সঙ্গেই অন্যান্য বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে ” বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান ” তুলে দেওয়া আরও ৯ জন বিশিষ্ট জনকে। এদের মধ্যে সাহিত্যে বিশেষ কাজের জন্য পেলেন ডাক্তার প্রভাত ভট্টাচার্য । তাপস মিশ্রকে দেওয়া হয় তাঁর বিখ্যাত বই ” ফরেশা খাতুন ” এর জন্য। ছড়া সাহিত্যে সম্মানিত হলেন শ্যামল রায় চৌধুরীকে । শিক্ষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এই সম্মান দেওয়া হয় সজল কান্তি মণ্ডলকে। সুদূর রাঢ় বাংলার পুরুলিয়া থেকে বেছে নেওয়া হয় প্রদীপ কুমার চন্দ্র কে। পেশায় শিক্ষক ও সমাজকর্মী। শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিয়মিত সাহিত্য চর্চার মধ্যে দিয়ে সমাজকে সচেতন করার বার্তা দিয়ে থাকেন। গবেষণা ক্ষেত্রে একজনকেই এই সম্মান দেওয়া হয়।নেতাজী গবেষক হিসাবে পরিচিত মৈত্রেয়ী বসুকে। এই মুহূর্তে নেতাজীর মতো দেশনায়ককে নিয়ে হাতে গোনা যে কয়েকজন নিয়মিত কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে মৈত্রেয়ী বসু একটা বিশেষ নাম।

সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দিতা গঙ্গোপাধ্যায় সঙ্গীত ক্ষেত্রে নিয়মিত চর্চা ও উত্তরণের জন্য এই সম্মান পেলেন। রাজ্য ছাড়িয়ে গোটা দেশে বিভিন্ন সময়ে তিনি আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে তাঁর নিজস্বতা প্রমাণ করেছে।
আবৃত্তি শিল্প তথা বাচিক শিল্পে শিক্ষাগুরু ও শিল্পী হিসেবে পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় পেলেন বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একজন সুদক্ষ বাচিক শিক্ষক হিসাবে তিনি ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছেন ।শুভ্রা চক্রবর্তী এই সম্মান পেলেন একজন প্রকৃত সমাজসেবী ও সৃজনশীল নারী উদ্যোগী হিসাবে। যিনি পেশাগতভাবে একজন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার। সৃজনশীল ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।
এবারে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মান ছোটদের বিভাগে নৃত্য শিল্পে পেলেন দুজন শিশু শিল্পী । একজন সুদূর উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট শহর থেকে দেবদ্রিতা ভট্টাচার্য আর একজন দক্ষিণ বঙ্গের বোলপুর সহর থেকে হিমিকা বজর। তাদের হাতেও এই সম্মাননা তুলে দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিরাই শংকর দত্ত – র এই প্রয়াসকে কুর্নিশ জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *